স্মার্ট কার্ড কি? স্মার্ট কার্ডের সুবিধা ও সেবাসহ বিস্তারিত তথ্য

স্মার্ট কার্ড কি? স্মার্ট কার্ডের সুবিধা ও সেবাসহ বিস্তারিত তথ্য

স্মার্ট কার্ড কি

অনেকের মনে স্মার্ট কার্ড নিয়ে নানা ধরণের প্রশ্ন রয়েছে। স্মার্ট কার্ড কি, স্মার্ট কার্ডের সুবিধা- অসুবিধা, স্মার্ট কার্ড কত ধরনের সেবা দিবে, এর মেয়াদ কত বছর, স্মার্ট কার্ডে কি কি তথ্য থাকে ইত্যাদি। তাই মনে হলো আপনাদের মাঝে স্মার্ট কার্ড সম্পর্কে বিস্তারিত এবং সঠিক তথ্যগুলো শেয়ার করলে আপনাদের হয়তো উপকার হবে। সেই কারণে আজকের এই পোষ্ট করা। তাহলে চলুন দেরি না করে জেনে নেই স্মার্ট এনআইডি কার্ড সম্পর্কে।

{tocify} Stitle={Custom Title}

স্মার্ট কার্ড কি?

আমরা বাংলাদেশের নাগরিক। আমাদের পরিচয়কে তুলে ধরে জাতীয় পরিচয় পত্র কিংবা Nid Card যাকে আমরা ভোটার আইডি কার্ডও বলে থাকি। এই Nid Card এর ডিজিটাল সংস্করণই হলো স্মার্ট কার্ড বা Smart Nid Card। স্মার্ট জাতীয় পরিচয় পত্রকে নকল করা প্রায় অসম্ভব। সেই করণে স্মার্ট কার্ডে থাকা নাগরিকের ভোটার তথ্য নিরাপদ এবং সুরক্ষিত থাকে।

স্মার্ট কার্ড তৈরীর উপাদান

স্মার্ট কার্ড তৈরীতে উপাদান হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে পলি-কার্বোনেট। সিমুলেশন টেষ্ট করে স্মার্ট কার্ডের আয়ুস্কাল নিশ্চিত করা হয়েছে কমপক্ষে ১০ বছর। ভোটারে তথ্য সংরক্ষণ করে রাখার জন্য ব্যবহৃত হয়েছে ২৫৬ কিলোবাইটের ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন কন্টাক চিপ। যা বিশ্বের তৈরী সকল স্মার্ট কার্ডের চেয়ে বেশি তথ্য ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং সবচেয়ে বেশি অ্যপ্লিকেশন চালাতে সক্ষম।

স্মার্ট কার্ডের আয়ুষ্কাল

চিপের আইসির আয়ুষ্কাল ১ লক্ষ সাইকেল। অর্থাৎ প্রতিদন ২৮ বার করে পাঞ্চ করা যাবে এবং ১০ বছর যাবত পাঞ্চ করা যাবে। ইতিমধ্যে আমাদের স্মার্ট এনআইডি কার্ডে একজন ভোটারের ২৮ ধরণের তথ্য রাখা হয়েছে। যা সময় এবং চাহিদা অনুযায়ী বাড়ানো হতে পারে।

স্মার্ট কার্ডের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য

স্মার্ট কার্ডে তিনটি স্তরে নাগরিকের ২৫ রকমের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রথমটি খালি চোখেই দেখা যাবে। দ্বিতীয় স্তরটি দেখার জন্য প্রয়োজন হবে আল্ট্রা ভায়োলেট রশ্মির এবং তৃতীয় স্তরটি দেখার জন্য ফরেনসিক টেষ্ট করার প্রয়োজন হবে। এর ফলে স্মার্ট কার্ডের কোন একটি লেয়ারের ক্ষতি হয়ে গেলেও তথ্য ও সার্বিক নিরাপত্তার কোন ক্ষতি হবে না।

ভ্রমণে স্মার্ট কার্ডের ব্যবহার

আমাদের দেশের স্মার্ট কার্ডটি ইতিমধ্যে বিশ্বব্যপী ট্রভেল ডকুমেন্ট হিসেবে ব্যবহার উপযোগীতার জন্য আইক্যাও সনদ ছাড়া আরো বিশটি সার্টিফিকেশন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। ভবিষ্যতে ভ্রমণ করার জন্য পাসপোর্টের প্রয়োজন হবে না। শুধুমাত্র স্মার্ট কার্ড থাকলেই ভ্রমণ করার সুযোগ থাকবে।

বাংলাদেশের স্মার্ট কার্ড কোথায় তৈরি হয়

সর্বপ্রথম বাংলাদেশের স্মার্ট কার্ড তৈরীর কন্ট্রাক দেয়া হয়েছিলো ফ্রান্সের একটি কোম্পানীর কাছে। কোম্পানীর নাম ছিলো ওবার্থু টেকনোলজি। কোম্পানীটি চুক্তি অনুযায়ী তাদের কাজ সময় মত শেষ করতে ব্যর্থ হয়। পরবর্তীতে নিজস্ব অর্থায়নে আমাদের দেশেই স্মার্ট কার্ড তৈরীর কাজ শুরু হয়। এখন পর্যন্ত আমাদের দেশেই স্মার্ট কার্ড তৈরী করা হচ্ছে ।

স্মার্ট কার্ড কবে চালু হয়

বাংলাদেশ সর্বপ্রথম স্মার্ট কার্ড চালু হয় ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে। পরবর্তীতে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ বাড়তে থাকে। একবারে সারা বাংলাদেশে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা সম্ভব না হলেও ধীরে ধীরে প্রতিটি জেলায় স্মার্ট কার্ড বিতরণের কাজ চলতে থাকে। 

এখনো পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে স্মার্ট কার্ড বিতরণের কার্যক্রম চলমান রয়েছে। আর ভবিষ্যতে স্মার্ট কার্ড বিতরণ চলতেই থাকবে। কারণ বর্তমানে ১৮ বছরের কম বয়স্ক নাগরিকদের জাতীয় পরিচয় পত্র দেয়ার লক্ষ্যে নতুন ভোটার হিসেবে নিবন্ধিত করা হচ্ছে।

স্মার্ট কার্ডের সুবিধা

স্মার্ট কার্ড ব্যবহারের নানাবিধ সুবিধা রয়েছে। তবে সেগুলো স্মার্ট কার্ড কত ধরনের সেবা দিবে সেগুলোর আওতায় পড়ে। যে বিষয়ে একটু পরেই বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। তার আগে স্মার্ট কার্ডের অন্যান্য আরো কিছু সুবিধা সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।

স্মার্ট কার্ডে নাগরিকের ভোটার তথ্য সর্বদা সুরক্ষিত থাকে যে সুবিধা সাময়িক জাতীয় পরিচয় পত্রে নেই।

স্মার্ট কার্ড নকল করা প্রায় অসম্ভব। পক্ষান্তরে সাময়িক জাতীয় পরিচয় পত্র সহজেই নকল যোগ্য।

পাঞ্চ করার মাধ্যমে সহজে স্মার্ট কার্ড থেকে ভোটার তথ্য যাচাই করা যায়। অন্যদিকে সাময়িক জাতীয় পরিচয় পত্র যাচাই করতে হলে অফিসে যেতে হয় কিংবা অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে লগইন করতে হয়। যা অনেকটা সময় স্বাপেক্ষ।

স্মার্ট কার্ড থাকলে EVM এর মাধ্যমে ভোট প্রদান সহজ হয়। সাময়িক জাতীয় পরিচয়পত্রধারীর ক্ষেত্রে EVM মেশিনে বোতাম চেপে এনআইডি নম্বর লিখে ভোটার তথ্য যাচাই করতে হয়। 

স্মার্ট কার্ড সহজে বিনষ্ট করা যায় না। সাময়িক জাতীয় পরিচয় পত্র সহজে বিনষ্ট হয়।

স্মার্ট কার্ডে ভোটার তথ্য ৩টি লেয়ারে সন্নিবেশিত থাকে। কোন একটি লেয়ারের ক্ষতি হলেও ভোটারের সকল তথ্য ফিরে পাওয়া যায়।

স্মার্ট কার্ডের অসুবিধা

স্মার্ট কার্ডের যেমন সুবিধা রয়েছে তেমন অল্প কিছু অসুবিধাও রয়েছে। চলুন জেনে নেই কি সেই অসুবিধাগুলো।

অনলাইন থেকে স্মার্ট কার্ড ডাউনলোড করা যায় না এবং ভবিষ্যতে যাবেও না।

আপাতত প্রতিটি নাগরিকের জন্য একটি মাত্র স্মার্ট কার্ড বরাদ্ধ হয়েছে। যা হারিয়ে গেলে দ্বিতীয়টি পাবেন না। তবে ভবিষ্যতে আবেদনের মাধ্যমে স্মার্ট কার্ড তুলে নেয়া যাবে।

আবেদন করে স্মার্ট কার্ড তোলার সুযোগ দেয়ার পর নির্ধারিত সরকারি ফি জমা দিয়ে স্মার্ট কার্ড তুলতে হবে। প্রথমটি ফ্রিতে পেলেও দ্বিতীয়টি ফ্রিতে পাবেন না।

স্মার্ট কার্ডের উপর ১০ সংখ্যার Nid Number লেখা থাকে। পুরাতন ১৭ সংখ্যা কিংবা ১৩ সংখ্যার আইডি নম্বর লেখা থাকে না। কিন্ত অনেকে স্মার্ট কার্ডধারীর ১৩ সংখ্যার এবং ১৭ সংখ্যার আইডি নম্বরের প্রয়োজন হয়। ফলে তারা এ বিষয়ে অনলাইনে খোজা-খুজি করতে থাকে।

স্মার্ট কার্ড কত ধরনের সেব দিবে

সর্বশেষ আপডেট অনুযায়ী একজন স্মার্ট কার্ড ব্যবহারকারী ২২ ধরনের সেবা গ্রহণ করতে পারবে। নিম্নে সেগুলো উল্লেখ করা হলো-

টিন সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে।

শেয়ারের জন্য আবেদন ও বিও হিসাব খোলা যাবে।

ড্রাইভিং লাইসেন্স করা ও নবায়ন করা যাবে।

ট্রেড লাইসেন্স করা যাবে।

পাসপোর্ট করা ও নবায়ন করা যাবে।

যানবাহন রেজিস্ট্রেশন করা যাবে।

চাকরির জন্য আবেদন করতে।

বিভিন্ন বিমা স্কিমে অংশগ্রহণ করার জন্য।

সম্পত্তি ক্রয়-বিক্রয় করার কাজে।

বিয়ে রেজিস্ট্রেশন ও তালাক রেজিস্ট্রেশনের জন্য।

ব্যাংকে একাউন্ট খোলার জন্য।

নির্বাচনে ভোটার শনাক্তকরণ করা যাবে।

ব্যাংক ঋণ নেয়ার জন্য।

গ্যাস সংযোগ, পানি সংযোগ ও বিদ্যুতের সংযোগ পাওয়ার জন্য।

সরকারি বিভিন্ন ভাতা উত্তোলন করার জন্য।

টেলিফোন ও মোবাইলের সংযোগ নেয়ার জন্য।

সরকারি ভর্তুকি পাওয়ার জন্য।

সাহায্য ও সহায়তার ক্ষেত্রে।

ই-টিকেটিং এর ক্ষেত্রে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রে।

আসামি ও অপরাধী শনাক্তকরণ করার জন্য।

বিজনেস আইডেনটিফিকেশন নম্বর পাওয়া জন্য এবং

সিকিউরড ওয়েবে লগইন করার ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্র প্রয়োজন হবে।

ভবিষ্যতে জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে আরো সুযোগ সুবিধা পাওয়া যেতে পারে। যেমন আইনগত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো এনআইডি কার্ড ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা হয়নি। পরবর্তীতে এ ধরণের সেবাসহ আরো অন্যান্য সেবাসমূহ অন্তর্ভূক্ত করা হতে পারে।

স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ কত বছর

আমরা ইতিমধ্যে জেনেছি যে, স্মার্ট জাতীয় পরিচয়পত্রের আয়ুস্কাল অন্তত ১০ বছর। তবে একজন ব্যবহারকারীর জন্য স্মার্ট কার্ডের মেয়াদ ১৫ বছর রাখা হয়েছে। স্মার্ট কার্ড ইস্যুর তারিখ থেকে পরবর্তী ১৫ বছর পর্যন্ত এর মেয়াদ থাকবে। তারপর স্মার্ট কার্ড নবায়ন করতে হবে। অন্যথা সেই স্মার্ট কার্ড দিয়ে আর কোন কাজ করা যাবে না। মেয়াদ উত্তীর্ণ বলে গণ্য হবে।

স্মার্ট কার্ডে কি কি তথ্য থাকে

একজন নাগরিক যখন নতুন ভোটারের জন্য আবেদন করে তখন তাকে নতুন ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ পূরণ করে আবেদন করতে হয়। এই ভোটার নিবন্ধন ফরম ২ এ ভোটার তার নিজের সম্পর্কে যা কিছু উল্লেখ করে সে সকল তথ্যই এনআইডি'র ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা হয়। 

আর যেহেতু স্মার্ট কার্ড তৈরীর সময় কার্ডের উপর ২৫৬ কিলোবাইটের কন্টাক চিপ বসানো হয়। সেহেতু ভোটারের সম্পর্কে যে সকল তথ্য এনআইডি'র ডাটাবেজে থাকে সেগুলোর মধ্য থেকে ২৮ রকমের তথ্য চিপের মধ্যে স্টোর করে দেয়া হয়। সে দিক থেকে বলতে গেলে আপনি যে সকল তথ্য দিয়ে ভোটার হবেন সে সকল তথ্যই স্মার্ট কার্ডে থাকবে।

স্মার্ট কার্ডে কি টাকা আছে?

আমাদের অনেকের মনেই এই প্রশ্নটা আসে যে স্মার্ট কার্ডে কি টাকা আছে? কারণ স্মার্ট কার্ড দেখতে অনেকটা এটিএম কার্ডের মত। এটিএম মেশিনে যেমন এটিএম কার্ড প্রবেশ করিয়ে টাকা তোলা যায় তেমন অনেকেই ভাবেন স্মার্ট কার্ড দিয়ে হয়তো অনুরুপভাবে টাকা তোলা যায়। 

আসলে বিষয়টি তেমন না। স্মার্ট কার্ডে কোন প্রকার টাকা থাকে না। যদি কেউ বলে স্মার্ট কার্ডের মাধ্যে টাকা আছে এবং সেটা তোলা যায়, তাহলে সম্পূর্ণই ভুল। স্মার্ট কার্ডের চিপের মধ্যে শুধু ভোটারের তথ্য সংরক্ষিত থাকে। স্মার্ট কার্ড রিডারে কার্ডটি পাঞ্চ করলে ওই কার্ডধারীর ভোটার তথ্য যাচাই হয়ে সমনে প্রদর্শিত হয়।

পরিশেষে

উপরোক্ত আলোচনা থেকে জানা গেলো যে স্মার্ট কার্ড কি, স্মার্ট কার্ড তৈরীর উপাদান, আয়ুষ্কাল, নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্য, এর সুবিধা-অসুবিধা, কি কি সেবা পাওয়া যায়, এতে টাকা আছে কি না ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে।

স্মার্ট কার্ডের বিষয়ে যদি আরো কিছু জানার থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্টস করবেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে অবশ্যই চেষ্টা করবো। লেখাটি যদি ভালো লাগে তাহলে বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। ধন্যবাদ..!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন